বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪
spot_img

২৫ মার্চ রাতে ভারতমূখী আহত মানুষের চিকিৎসা সহায়তায় রাজভান্ডার অবমুক্ত করেন মংরাজা মংপ্রু সাইন

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪
আবদুল মান্নান, মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি) : স্বাধীনতার স্মৃতিবিজরিত পার্বত্য খাগড়াছড়ির তৎকালীন মংরাজা প্রয়াত মংপ্রু সাইন বাহাদুর ছিলেন একজন শাসক ও সম্মুখ সারির মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে চট্টগ্রাম শহরে পাক-বাহিনী ও তাদের দোসরদের বর্বরতায় ভারতগামী মানুষের চিকিৎসা ও সহায়তায় রাজ ভান্ডার অবমুক্ত করেছিলেন। প্রত্যক্ষভাবে অস্ত্র হাতে সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি মুক্তিবাহিনীকে ৩৩টি উন্নতমানের অস্ত্র ও ১১০০ ডলার বৈদেশিক মুদ্রা ও রাজ ভান্ডার উন্মুক্ত করে রাজ প্রসাদে শরর্নাথী ক্যাম্প ও নানুমা দেবী হলে মিনি হাসপাতাল বানিয়ে দেশ রক্ষায় ত্যাগ স্বীকার করেছেন। দীর্ঘ ৯ মাস প্রত্যক্ষ যুদ্ধ অংশগ্রহন করেছেন। পাকবাহিনী ও তাদের দোসরা রাজ প্রসাদে সেকালে যে তান্ডবলীলা চালিয়ে অস্ত্রাগার ও মাটিতে পুঁতে রাখা স্বর্ণালংকার লুট, হাসপাতালে হামলাসহ পুরো রাজপ্রসাদ লন্ডভন্ড করে বির্বণ করে গেছেন! যা আজও দৃশ্যমান। প্রয়াতের দৌহিত্র ও রাজা মংপ্রু সাইন বাহাদুর ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান কুমার সুইচিংপ্রু সাইনের সাথে আলাপকালে এবং রাজ পরিবারের ধারাবাহিক ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রামে রাজতন্ত্রের ইতিহাস বহুকাল পুরনো। তারমধ্যে রাজা কংজয় (১৭৯৬-১৮২৬)এর রাজত্বকাল থেকে রাজ পরিবারের ধারাবাহিক ইতিহাস ঐতিহ্যের যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়। ৫ম মংরাজা মংপ্রু সেইন ৪৪ বছর বয়সে তাঁর মা রাণী নানুমার মৃত্যুর পর ১৯৫৪ সালে রাজত্ব পায়। তাঁর জন্ম ১৯১০ সালের ১০ নভেম্বর। মাত্র ২ বছর বয়সে পিতা কোংগলাকে হারিয়ে মায়ের আদরে বেড়ে উঠেন মংপ্রু সাইন। ১৯৭১ সালের ১মার্চ পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের অধিবেশন স্থগিতের প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে প্রজাদের নিয়ে প্রতিবাদ মিছিল ও বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের পর খাগড়াছড়িতে গড়ে উঠা দুর্বার আন্দোলনে রাজা মংপ্রু সেইন বাহাদুর প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেয়। ২৫ মার্চ কালো রাত্রিতে ঢাকার পর চট্টগ্রামে পাকসেনার ববর্রতায় শহর ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পথে সাধারণ মানুষকে আশ্রয়স্থল ও ক্যাম্প হিসেবে রাজপ্রসাদে আশ্রয় ও যুদ্ধে রসাদ যোগান দিতেন রাজা বাহাদূর। একপর্যায়ে মুক্তিবাহিনীকে তাঁর অস্ত্র ভান্ডার থেকে ৩৩টি উন্নতমানের অস্ত্র,১১০০ডলার বৈদেশিক মুদ্রা, প্রাইভেট কার, জীপ গাড়ী দিয়ে যুদ্ধে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। তাঁর মা নানুমা দেবী হলটিকে হাসপাতাল বানিয়ে আহত মানুষকে চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেন। মুক্তিবাহিনীর সাথে মহালছড়িতে পাকবাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন রাজা মংপ্রু সাইন। এক পর্যায়ে মানিকছড়ি ও মহকুমা শহর রামগড় পতনের আশংকায় সিংহাসন ও ধন-সম্পদের মায়া ত্যাগ করে ১মে -১৯৭১ সালে সপরিবারে ভারতের হরিনা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়ে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ভারতে আশ্রিত হয়ে আর্ন্তজাতিক সংবাদ মাধ্যমে পাকবাহিনীর ভয়াবহতার তথ্য বিনিময় করেন রাজা মংপ্রু সাইন। এক পর্যায়ে দেশে ফিরে কুমিল্লা-আখাউড়া এলাকায় দীর্ঘ সময় সশস্ত্র ও সম্মুখ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এদিকে পাকবাহিনী ও তাদের দোসরা রাজ প্রসাদে তান্ডবলীলা চালিয়ে অস্ত্রাগার ও মাটিতে পুঁতে রাখা স্বর্ণালংকার লুট, হাসপাতালে হামলাসহ পুরো রাজপ্রসাদ লন্ডভন্ড করে বির্বণ করেন। যা আজও দৃশ্যমান! পরে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক লাল-সবুজের পতাকা অর্জনের পর রাজা সপরিবারে দেশে ফিরে দেখেন ক্ষত, বিক্ষত রাজপ্রসাদ। তবুও দেশমাতৃকার মায়ায় হারানোর শোক ভূলে গিয়ে রাজত্ব শুরু করেন। এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজা মংপ্রু সেইনকে খাগড়াছড়ির গর্ভনর নিয়োগ করেন। রাজ্যভার পালনকালে ১৯৮৪ সালে পরলোকগমন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মংপ্রু সাইন বাহাদুর ।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here