দৈনিক বাংলা খবর২৪ অনলাইন নিউজ ডেস্ক, ২৩ জানুয়ারি. ২০২৫।
বিশেষ প্রতিনিধি: রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (সিসিএস) ফরিদ আহামেদ সহ ১০ কর্মকর্তা এবং এক ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালে মালামাল সরবরাহ না করে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৮৭ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতা পেয়ে দুদক চট্টগ্রাম -১ এর উপপরিচালক মো. আহসানুল কবীর পলাশ বাদী হয়ে দুটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলার নং- (চট্টগ্রাম: ৩৩১০০ তাং- ১৭/০৯/২০২৪)।
সরকারি দায়িত্বশীল কর্মকর্তার এমন ঘটনা সরকারি (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮-এর ৩(খ) ও ৩(ঘ) বিধি মোতাবেক অসদাচরণ ও দুর্নীতির পর্যায়ভুক্ত এবং গুরুদ-যোগ্য অপরাধ।
কিন্তু সাবেক প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (সিসিএস) ফরিদ আহামেদ সহ ১০ কর্মকর্তা শাস্তির বদলে পেয়েছেন পদোন্নতি। সাবেক প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক ফরিদ আহামেদ পদোন্নতি পেয়ে হযেছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের রেলপথ পরিদর্শন অধিদপ্তরের (জিআইবিআর) সরকারি রেল পরিদর্শক।
আর এদিকে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বর্তমান প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক হিসাবে দ্বাযিত্ব নেয়া বেলাল হোসেন সরকারের রযেছে দুর্নীতির বিশাল রেকর্ড। রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন স্টেশনের মালপত্র কেনাকাটায় প্রায় ২০০ কোটি টাকার মত দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। পরে ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বাংলাদেশ রেলওয়ের সচিব সেলিম রেজার স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে প্রকৌশলী মো. বেলাল হোসেন সরকারকে বহিষ্কার করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রেলের মালামাল ক্রয়ে দুর্নীতিতে জড়িত থাকার পর বরখাস্ত হলেও সেই বেলাল হোসেন সরকার কোন এক অদৃশ্য ক্ষমতার বলয় ব্যবহার করে ২০২১ সালে পদোন্নতি নিয়ে হন রেলওয়ের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা।সেখানেও থেমে নেয় তার দুনীতি। ২২২ কোটি টাকার চট্টগ্রামের একটি প্রকল্পে প্রায় ১৫ কোটি টাকা পরমর্শ ফি চেয়ে বসেছেন তিনি। এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। সেখানেও চলতে থাকে তার একের পর এক দুনীতি।
২০২৫ এর জানুয়ারিতে তিনি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক হিসাবে দ্বাযিত্ব নেন। তিনি দ্বাযিত্ব নেওয়ার পরই রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পাহাড়তলী প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের (সিসিএস) এর গুদাম থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকার মূল্যবান মালামাল চুরি হয়। চুরি হয়ে যাওয়ার ঘটনায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে চলছে এখন নানা আলোচনা-সমালোচনা। তবে কখন এই মালামাল চুরি হয়েছে তা জানে না কেউ।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) বিকালে গুদাম থেকে সরঞ্জাম বের করতে গিয়ে ধরা পড়ে বিষয়টি। এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে। গুদাম থেকে মূল্যবান সরঞ্জাম উধাও হওয়ার বিষয়টি মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) সকালে নিশ্চিত করেছে জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তরের নিয়ন্ত্রক (পরিদর্শন) গোলাম মোর্শেদ।তিনি বলেন, গুদাম থেকে সরঞ্জাম চুরির বিষয়টি পরিকল্পিত। মিলেছে চুরির আলামতও। প্রাথমিকভাবে তিন জনকে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে। এরপরও ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করবেন। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে এসিওএস মো. আলমগীরকে।
এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেই তাকে বদলি করা, বরখাস্ত বা বাধ্যতামূলক অবসর প্রদানের মতো বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখাকেই স্বাভাবিকতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দুর্নীতির জন্য কার্যকর জবাবদিহিতা ও প্রতিরোধের সম্ভাবনার মানদণ্ডে যা একেবারেই যথেষ্ট নয়।
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৭ অনুযায়ী, সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের শাস্তি শুধু বদলি, বরখাস্ত ও অবসর প্রদানে সীমাবদ্ধ রাখার মাধ্যমে অন্য সব শ্রেণি-পেশার জনগণের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের পরিচায়ক ও সরকারি খাতের পাশাপাশি অন্যান্য খাতেও জোগসাজশের মাধ্যমে দুর্নীতির বিকাশের অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে। দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেলায়ও অন্য সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য দেশের প্রচলিত আইনি প্রক্রিয়ায় তদন্ত ও বিচারের আওতায় এনে দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।